অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা
অনুমোদন পাওয়ার আগেই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন মোকলেছুর রহমান। একইসাথে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নিচ্ছেন অবৈধ আর্থিক সুবিধা।
গেলো বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মোকলেছুর রহমানকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। তার এই নিয়োগ অনুমোদনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয় গত ১ অক্টোবর।
তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করায় গত ৪ জানুয়ারি মোকলেছুর রহমানের আবেদন না মঞ্জুর করে আইডিআরএ। পরবর্তীতে নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে রিভিউ আবেদন করেছে কোম্পানিটি।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার আগেই ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকাসহ কোম্পানির দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মোকলেছুর রহমান। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠানো কোম্পানির চিঠিপত্রেও স্বাক্ষর করছেন তিনি।
অথচ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়- বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব (সিসি) পালন করবেন ইকবাল মাহমুদ। এ কারণেও ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোকলেছুর রহমানের দায়িত্ব পালন অবৈধ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোকলেছুর রহমান আইন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার আগেই বোর্ড মিটিং ফি বাবদ অর্থ নেন কোম্পানি থেকে। ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়ার ব্যাংকের একাউন্ট পেয়ী চেকে তাকে এই ফি পরিশোধ করা হয়। এছাড়া তিনি অনুমোদনের আগেই মাসে ৩ লাখ টাকা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অথচ আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুসারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার আগে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কোম্পানি থেকে কোন বেতন-ভাতা নেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করারও সুযোগ নেই। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ এর প্রবিধান ৪(৫)-এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে চাকরিতে যোগদানের মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই উৎসব বোনাস নিয়েছেন কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সুজয় কুমার বিশ্বাস। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তিনি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন এবং কোম্পানি থেকে উৎসব বোনাস নেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর। একাউন্ট পেয়ী চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার এই বোনাস গ্রহণ করেন তিনি।
এছাড়া বোর্ড মিটিং ফি বাবদ অর্থও নিয়েছেন সিএফও সুজয় কুমার বিশ্বাস।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সেক্রেটারি (সিএস) কাজী ফারহানাও বোর্ড মিটিং ফি বাবদ অর্থ নিয়েছেন। অথচ আইন অনুসারে বোর্ড মিটিং বাবদ কোন ফি নেয়ার সুযোগ নেই কোম্পানি সেক্রেটারির।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) ইকবাল মাহমুদ বলেন, ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মোকলেছুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। গত ১ অক্টোবর থেকে তিনি কোম্পানির দায়িত্ব পালনে নিয়মিত অফিস করছেন। আর এ কারণেই চুক্তির শর্ত মোতাবেক তাকে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে।
অনুমোদনের আগেই বেতন-ভাতা নেয়ার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আইডিআরএ’র কাছে গত ১ অক্টোবর থেকে মোকলেছুর রহমানের নিয়োগ অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে তো ১ অক্টোবর থেকেই তিনি বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন।
তাছাড়া এখানে মানবিকতার একটি বিষয় রয়েছে- একজন ব্যক্তি কোম্পানির দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত অফিস করবে কিন্তু বেতন-ভাতা দেয়া হবে না এটা কিভাবে হয়, বলেন ইকবাল মাহমুদ।
কর্মকর্তাদের বোর্ড ফি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারিকে বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারিকে টিএ/ডিএ হিসেবে একটা ফি দেয়া হয়েছিল। তবে পরে আমরা বিষয়টি জানতে পেরে তাদের নেয়া বোর্ড মিটিং ফি ফেরত নিয়েছি।
অনুমোদনের আগেই বেতন-ভাতা নেয়ার বিষয়ে মোকলেছুর রহমান বলেন, মুখ্য নির্বাহী পদে কোন ব্যক্তিকে যখন নিয়োগ দেয়া হয় তখন শর্তই দেয়া হয়- ছাড়পত্র দাখিলের। এক্ষেত্রে যখন একজন ব্যক্তি একটি কোম্পানি ছেড়ে আসে তখন তার ব্যয় নির্বাহ হবে কোথা থেকে, যদি নতুন কোম্পানি তাকে বেতন-ভাতা না দেয়! বিষয়টি আইডিআরএ’র বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানান, মোকলেছুর রহমান।