কমিশন খরচ, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, প্রিমিয়াম তামাদির হার বেড়েছে বেস্ট লাইফে
1 min read

কমিশন খরচ, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, প্রিমিয়াম তামাদির হার বেড়েছে বেস্ট লাইফে

আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ৭টি নির্দেশনা দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এসব নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম ছিল অবৈধ কমিশন বন্ধ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমার মধ্যে আনা, নবায়ন প্রিমিয়ামের হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করা। তবে এসব নির্দেশনার একটিও পরিপালন করেনি বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

উল্টো উচ্চহারে কমিশন প্রদান, ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি, পলিসি তামাদির হার বেড়েছে বীমা কোম্পানিটির। ফলে বীমা গ্রাহকদের ঝুঁকি বেড়েছে বেস্ট লাইফে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালের সমাপনী হিসাব পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

আইডিআরএ’র নির্দেশনা বলা হয়েছিল, ২য় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অথচ ২০২৩ সালে বেস্ট লাইফের ২য় বর্ষ নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের হার ১৯ শতাংশ, বাকী ৮১ শতাংশ-ই ল্যাপস। এর আগে ২০২২ সালে এই নবায়ন প্রিমিয়ামের হার ছিল ২৭ শতাংশ।

অর্থাৎ ২য় বর্ষ নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের হার আরো ৮ শতাংশ কমেছে।

এ ছাড়াও মোট নবায়ন প্রিমিয়ামের হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে বলা হয়েছিল। অথচ ২০২৩ সালে কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়ামের হার ৫২ শতাংশ। যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ গেলো বছরে কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম আয় কমেছে ২৬ শতাংশ।

সমাপনী হিসাবের তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে গ্রুপ ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স বাদ দিয়ে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করে করে ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এসে ২য় বর্ষ নবায়ন প্রিমিয়াম আয় করে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্রিমিয়াম ল্যাপস হয়েছে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ।

এর আগে ২০২১ সালে সংগৃহীত ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা ১ম বর্ষ প্রিমিয়ামের মধ্যে ২০২২ সালে ২ বর্ষ নবায়ন এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর প্রিমিয়াম ল্যাপস হয়েছে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

২০২৩ সালে বেস্ট লাইফের সর্বমোট নবায়ন প্রিমিয়াম এসেছে ৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। যা ২০২২ সালের মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ৫২ শতাংশ।

অপরদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-নিষেধ থাকার পরও কমিশন প্রদানের হার বেড়েছে বেস্ট লাইফে।

২০২৩ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে কমিশন দিয়েছে ৫০ শতাংশ। যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ গেলো বছর কোম্পানিটির কমিশন প্রদানের হার বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে বেস্ট লাইফের।

সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছরে কোম্পানিটির প্রত্যক্ষ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। সাময়িক হিসাব অনুসারে ২০২৩ সালে কোম্পানিটি প্রত্যক্ষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৯.৬১ শতাংশ। যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৬৮.১০ শতাংশ।

২০২৩ সালে কোম্পানিটি ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। অথচ আইন অনুসারে এই ব্যয় অবৈধ।

হিসাব সমাপনীর তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালে বেস্ট লাইফ সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এই প্রিমিয়াম সংগ্রহে কোম্পানিটির খরচ করেছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অথচ খরচের অনুমোদন ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অবৈধ ব্যয় করেছে।

এর আগে ২০২২ সালে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে বেস্ট লাইফ।

এদিকে উচ্চহারে কমিশন প্রদান ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রয়োজনীয় লাইফ ফান্ড গড়ে পারেনি বেস্ট লাইফ। দীর্ঘ ১০ বছরে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছরে কোম্পানিটি ১.২৩ কোটি টাকা গ্রাহক তহবিলে জমা করেছে। অথচ গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়েছে ২৩.২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বীমা গ্রাহকদের জমাকৃত প্রিমিয়ামের প্রায় ৯৫ শতাংশই খরচ করেছে ব্যবস্থাপনা খাতে।

সম্পদ বিনিয়োগেও আইন মানেনি বেস্ট লাইফ।

কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘণ করে ৮৩ শতাংশ সম্পদ বিনিয়োগ করেছে বেসরকারি বা অন্যান্য খাতে। আর মোট বিনিয়োগের ১৭ শতাংশ রয়েছে সরকারি খাতে।

অথচ লাইফ বীমা কোম্পানির সম্পদের অন্যূন ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে।

সমাপনী হিসাবের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে গড়মিল হিসাব প্রদান করেছে বেস্ট লাইফ। বিনিয়োগ থেকে শুরু করে লাইফ ফান্ড, প্রিমিয়াম আয় ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই গড়মিল হিসাব দিয়েছে বীমা কোম্পানিটি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাখিল করা বেস্টলাইফের হিসাব অনুসারে বর্তমানে কোম্পানিটির মোট এজেন্ট সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫ জন। তবে এসব এজেন্টের মধ্যে মেয়াদসহ লাইসেন্স আছে ১৫৮ জনের, যা কোম্পানিটির মোট এজেন্টের ০.২৬ শতাংশ।

অর্থাৎ বেস্ট লাইফের ৯৭.৩৯ শতাংশ এজেন্টের বৈধ লাইসেন্স নেই।

তবে কোম্পানিটি বলছে, ১ হাজার ৯১৫ জন এজেন্টের লাইসেন্স পেতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী এজেন্টের সংখ্যা ৫১৮ জন।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মুখ্য নির্বাহী না থাকায় কথা বলেন বীমা কোম্পানিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চীফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার মো. ওয়াহিদুল হক।

ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করছি খরচ কমানোর। তবে আগের বছরের তুলনায় ব্যবসা বৃদ্ধি হয়েছে এবং এ কারণে খরচও বেড়েছে। একইপ্রেক্ষিতে কোম্পানির কমিশন খরচও বেড়েছে।

সরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যেটা জানি- পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করতে হয়। সে হিসাবে আমাদের বিনিয়োগ ঠিক আছে।

তবে লাইফ বীমার সম্পদ বিনিয়োগের নতুন প্রবিধানে কোম্পানির সম্পদের ৩০ শতাংশ বলতে কি বোঝানো হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন, বলেন ওয়াহিদুল হক।

লাইসেন্স ছাড়া এজেন্টকে কমিশন দেয়া হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইডিআরএ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত আমাদের এজেন্ট সংখ্যা ৬৭৬ জন। এর মধ্যে ৫১৮ জনের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এরইমধ্যে প্রায় ২ হাজার এজেন্টের লাইসেন্স চেয়ে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *