বীমা উন্নয়ন
বীমা থাকলে আয়কর রেয়াত
সম্মানিত চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক স্যারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে আলোচনা হয় ‘বীমা থাকলে আয়কর রেয়াত’ নিয়ে
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজস্ব আয় একটা বড় বিষয়। সরকার কিন্তু বাজেট দিয়েছে ৭ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে নতুন করে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা ৫ লক্ষ কোটি টাকার সেটি আদায় করার সাথে সাথে কিন্তু বীমা খাতেরও একটি সম্পর্ক আছে। আবার যারা বীমা করবেন তাদেরও সাথে কিন্তু আয়কর থেকে কিছুটা হলেও রেয়াত পাওয়ার বা মাফ পাওয়ার যা কর হবে তা থেকে কিছুটা মাফ পেতে পারেন যদি আপনার একটা ইন্স্যুরেন্স থাকে।
বীমার সাথে আয়করের কি সম্পর্ক, কি সুবিধা আছে; যদি আপনি বীমা করেন বা একজন পলিসিহোল্ডার হয়ে থাকেন- সে বিষয় এবং বীমার সাথে যে সম্পর্কের কথা বলছি আমরা এতদিন; আসলে জীবনের ঝুঁকির কথা বলি, সম্পদের ঝুঁকির কথা বলি। কিন্তু বীমার সাথে আরেকটি বড় সম্পর্ক সেটা হচ্ছে এনবিআরের আছে, সরাসরি আয়করের।
এস এম জিয়াউল হক উল্লেখ করেন আমাদের যে ইনকাম এবং ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হয় যেটা আয়করের ব্যবস্থা; সেখানে এক ধরনের রিবেট (ছাড়) করা সুযোগ আছে। এই রিবেটটা বিভিন্ন খাতে উল্লেখ করা আছে। সেক্ষেত্রে বীমা একটা খাত যেখানে পরিপূর্ণভাবে একজন ব্যক্তি বীমার মাধ্যমে, বীমা করার মাধ্যমে প্রতি বছর রিবেট পেতে পারে এবং সেই রিবেটটা প্রায় ১৫%।
আপনি যদি একটা ব্যাংকে ডিপিএস খুলেন বা ব্যাংকে কোন ধরণের বিনিয়োগ করেন- সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার উপরে রিবেট পেতে পারেন। সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার উপরে ১৫% রিবেট পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে এই অংকটা কোন ধরনের সীমা নির্ধারণ করা নেই। একজন ব্যক্তি এক বছরে ১ লাখ টাকার প্রিমিয়াম জমা দেয় ওই বছরই কিন্তু নগদে ১৫ হাজার টাকা রিবেট পাওয়ার সুযোগ আছে। এবং তিনি প্রতিবছরই যদি এই ১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে জমা দেন প্রতি বছরই কিন্তু রিবেট পাওয়ার সুযোগ আছে। যেটা অন্য খাতে এই সুযোগ নেই।
একজন বীমার গ্রাহক তিনি কিন্তু তার প্রিমিয়াম দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে বীমা অংকের মাধ্যমে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারছেন। আবার আমরা অনেক সময় বলি- বীমা করলে কি পাওয়া যায়! নগদে কিন্তু এই রিবেট পাওয়ার সুযোগ আছে। সরকার যেহেতু এখন আমাদেরকে ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার জন্য বলছেন এবং সেটার ব্যাপারে সচেতন করছেন; সেক্ষেত্রে আমি বলব এই রিবেটের সুযোগ পাওয়ার সুযোগ আছে। এখন যেহেতু বিনিয়োগের মাস, জুন মাস। সবাই টিআইএন এবং রির্টাণ নিয়ে ভাবছেন। এই সময়গুলোতে যত বেশি প্রচারিত হবে, মানুষ তত বেশি এটার সম্পর্কে জানতে পারবে। সে কিন্তু বীমার মাধ্যমে নগদ (রিবেট) পাবে।
কারণ একটা জিনিস খেয়াল করেন, আমাদের সবাই যখন প্রশ্ন করে- বীমা থেকে আমি কি পাব! বীমা করলে কি লাভ! আগে যে কথাটা ছিল- বীমা করলে মারা গেলে বেনিফিট। আমরা এখনকার জেনারেশনের ইন্স্যুরেন্সের যারা কর্মী আছি, যারা নেতৃত্বে আছি; তারা কিন্তু এখন বলতে চাই- জীবন বীমা আপনার জীবনের বীমা। জীবনের পরের বীমা না। তাহলে জীবনের বীমা কিভাবে- এইযে পলিসি করলেন, তার মাধ্যমে ১৫% রিবেট পাইলেন; ১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ১৫ হাজার টাকা ইমিডিয়েট পেলেন।প্রতি বছর পাচ্ছেন।
মানুষ বা যারা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষ এবং যারা করযোগ্য, যাদের টিএনআই আছে; বিষয় টি জানানোর জন্য বীমা কোম্পানিগুলো উদ্যেগ নিচ্ছেন। এগুলো তারা সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এটা জানানোর চেষ্টা করছে। আজকে আমাদের উদ্যোগটাও কিন্তু তেমন-ই। আমরা বিভিন্ন জায়গায় লেখার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস, এই ধরনের আয়োজন, আলোচনার মাধমে মানুষ কিন্তু এবং যারা আমাদের গ্রাহকরা হবেন নতুন ও পুরাতন গ্রাহক; তারা কিন্তু বুঝতে পারবে। একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে দেশের জন্য তার কন্ট্রিবিউশন যেমন আছে, তার নিজের নিরাপত্তা এবং রিবেট পাওয়ার সুযোগটাও তার তেমন আছে।
আমাদের ৮৮ লাখ টিআইএন ধারী আছে। ৩৩ লাখের মত আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। এখনও প্রায় ৫০ লাখ মানুষ আছে যাদের টিআইএন নাই। এই মানুষগুলোকেও যদি আমরা বীমার আওতায় আনতে পারি; তাহলে তো বীমা খাতে এখন যে আমাদের ১ কোটির মত গ্রাহক আছে, সেটা তো দেড় কোটি হয়ে যাবে এবং প্যানিট্রেশনটাও বাড়াতে পারবে।
যদি সরকার চায় বীমা কোম্পানিগুলো এই আয়কর রিবেট পাওয়ার জন্যও কিন্তু এক ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে পারে উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এবং আমার বিশ্বাস, এর মাধ্যমে আমাদের যে ৮৮ লাখ গ্রাহক আছেন যারা টিআইএন ধারী; তাদেরকে যেমন আমরা বীমাসেবা আওতায় নিয়ে আসতে পারি তেমনি তাদেরকে কর রেয়াতের সুযোগের আওতায়ও নিয়ে আসতে পারব। আমার বিশ্বাস, সামনের দিনগুলোতে হয়তো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো এ নিয়েও কাজ করবে।
বীমার সাথে আয়করের বা রাজস্ব বোর্ডের যে সম্পর্ক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেমনে বাড়ছে তেমনে বীমা খাতের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে। সেখানে বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে একজন করদাতা কিভাবে বীমা করলে সুবিধা পাবেন আলোচনা ।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এতে বীমা খাতে অবদান বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তিক যে সুবিধা সে প্রচার প্রচারণা নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলো আরো বেশি এগিয়ে আসবে। যাতে বীমার প্রসার ঘটবে এবং একইসাথে আয় করের রেয়াত পাওয়ার যে সুযোগটা আছে তা কাজে লাগিয়ে একটি উইন ইউন সিচুয়েশনের দিকে যাবে। যা দিনশেষে বীমা খাতকে তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করবে এবং শক্তিশালী করবে।