বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ প্রবিধানমালায় আনা হলো পরিবর্তন
গত ২৪ ডিসেম্বর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর সংশোধনীর প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায়। একদিকে ছাড় দেয়া হয়েছে কর্ম অভিজ্ঞতা ও স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদে। অন্যদিকে জোর দেয়া হয়েছে ডিগ্রির ফলাফলে।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে- কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যুন ২য় শ্রেণী বা সমমানের সিজিপিএ সহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী বা ২য় শ্রেণী বা সমমানের সিজিপিএ সহ ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রী।
তবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশন হতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে।
একইসাথে বন্ধ করা হয়েছে বীমা আইনের ৫০(১) ধারায় অপসারিত মুখ্য নির্বাহীর পুনর্নিয়োগের পথ। এ ছাড়াও বহুজাতিক বীমা কোম্পানির উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখাসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে এই প্রবিধানমালায়।
এক্ষেত্রে কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে কোনো ব্যক্তির নিয়োগ ইতোপূর্বে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে থাকলে, তার ক্ষেত্রে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য হবে।
এর আগে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩য় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রীও গ্রহনযোগ্য ছিল। অর্থাৎ স্নাতকের ফলাফলের বিষয়ে কোন সীমা নির্ধারণ ছিল না। এমনকি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়েও কোন বক্তব্য ছিল না।
মুখ্য নির্বাহীর কর্ম অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলা হয়েছে- ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা এর অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যুন ২ বছর কর্ম অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যুন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা;
তবে, বীমাকারীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করলে উল্লেখিত শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিম্নোক্ত দু’টি ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করতে পারবে।
সরকার বা সরকারি কোন দপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কোনো বীমা কোম্পানি যার ৫০ শতাংশের অধিক শেয়ারের মালিকানা সরকার বা সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, সংস্থা, বা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে এইরূপ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে; এবং
আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ বছরের বীমা বিষয়ক কাজে সরাসরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে।
এর আগে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে অব্যবহিত নিম্নপদে কমপক্ষে ৩ বছর সহ বীমা ব্যবসায় ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হতো। অর্থাৎ সংশোধনীতে অব্যবহিত নিম্নপদে ১ বছর ও বীমা ব্যবসায় ৩ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা ছাড় দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা এবং বিদেশী বহজাতিক বীমা কোম্পানিতে কর্মরতদের মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে এই সংশোধনীতে।
মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রবিধান ৪ এর উপ-প্রবিধান (১) এবং (২) এর পরিবর্তে উপ-প্রবিধান (১), (১ক) এবং (২) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ বা নিয়োগের নবায়ন চুক্তিভিত্তিক হবে।
কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ ও উল্লেখপূর্বক বহুল প্রচলিত ১টি বাংলা ও ১টি ইংরেজী জাতীয় পত্রিকায় এবং কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবে এবং যোগ্য আবেদনকারীগণের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে উক্ত পরিচালনা পর্ষদ একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করবে।
কোন বীমা কোম্পানি তার মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ বা নিয়োগের নবায়নের পূর্বে কর্তৃপক্ষের নিকট নির্বাচিত প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত, সম্মানী প্যাকেজ এবং তাকে নিয়োগের সুপারিশ সংক্রান্ত বোর্ড সভার কার্যবিবরণীসহ নিয়োগ বা নিয়োগের নবায়নের আবেদনপত্র দাখিল করবে।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগলাভের জন্য প্রার্থীর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ৪০ বছরের বিধান বাদ দেয়া হয়েছে এবং মেয়াদ শেষ হলে ৬৭ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পুনর্নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশী বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের নাগরিক বা বাংলাদেশের ডমিসাইল’ হওয়ার বাধ্যবাধকতাও তুলে নেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে প্রার্থীর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে নতুন দফা ‘জ’ যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- কোনো বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কর্মরত হিসেবে থাকাকালীন দোষী সাব্যস্ত হয়ে আইনের ধারা ৫০ এর উপ-ধারা (১) বা প্রবিধান ৭ অনুযায়ী অপসারিত হলে তিনি মুখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগলাভের যোগ্য হবেন না।
মুখ্য নির্বাহীর মোট বেতনের বিষয়ে বলা হয়েছে- মূল বেতন, বাড়ী ভাড়া এবং অন্যান্য ভাতাদি (ভবিষ্য তহবিল, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, বীমা, এক বা একাধিক ইনসেনটিভ বোনাস, ইত্যাদির পরিমাণ বা সীমা নির্দিষ্ট অংকে উল্লেখসহ) সমন্বয়ে মোট বেতন নির্ধারিত হবে।
এক্ষেত্রে উল্লেখিত এক বা একাধিক ইনসেনটিভ বোনাস ১ বছরে সর্বমোট ১০ লাখ টাকার অধিক প্রদেয় হবে না; এবং অন্যান্য সুবিধাদি, যেমন-গাড়ী, জ্বালানী, চালক, ইউটিলিটি বিল, ছুটি, পরিবহন সহায়তা, ইত্যাদির পরিমাণ বা সীমা নির্দিষ্ট থাকতে হবে।