ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আবাসিক ভবনের বীমা গ্রহণ বেড়েছে তাইওয়ানে
দক্ষিণ চীন সমুদ্রে অবস্থিত পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দ্বীপদেশ তাইওয়ান। আয়তনের হিসাবে বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ, ৩৫ হাজার ৮৮৭ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির বেশির ভাগ অংশ মূলত পাহাড় আর পর্বতে ঘেরা। সমতল অঞ্চল নেই বললেই চলে।
প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তাইওয়ানের জিডিপির আকার ৬৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩২ হাজার ৭৫৬ মার্কিন ডলার। এটি ২০২২ সালের তথ্য।
সম্প্রতি দেশটিতে বড়মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৭.৪ মাত্রার এই ভূমিকম্প ছিল দেশটির ২৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। গত ৩ এপ্রিলের ওই ভূমিকম্পে অন্তত ১৬ জন নিহত এবং প্রায় সাড়ে ১১শ’ মানুষ আহত হয়।
তাইওয়ান জুড়ে প্রায় ৯.৩ মিলিয়ন আবাসিক ভবনের মধ্যে বীমার আওতায় আছে ৩.৫২ মিলিয়ন ভবন।। এখনো ৫.৫ মিলিয়ন আবাসিক ভবন বীমা কাভারেজের আওতার বাইরে রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে আবাসিক ভবনের বীমা পলিসির হার বেড়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে এক ভূমিকম্পে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে দেশটিতে আঘাত হানে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে নিহত হন ৭ জন।
তাইওয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল ১৯৯৯ সালে। এটি ছিল ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে দেশটির ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন।
‘৯২১ কম্পন’ নামে পরিচিত ১৯৯৯ সালের ওই ভূমিকম্পের পর সতর্ক হয়ে যায় তাইওয়ান সরকার। শক্তিশালী করা হয় দেশটির ইমারত বিধিমালা (বিল্ডিং কোড) সংশোধন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন।
তাইওয়ানে গত ৩ এপ্রিলের ভূমিকম্পে ৪৭২টি বীমা দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এসব বীমা দাবির আর্থিক মূল্য ২৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭৬২ মিলিয়ন তাইওয়ান ডলার।
তাইওয়ান রেসিডেন্সিয়াল আর্থকুয়েক ইন্স্যুরেন্স ফান্ড (টিআরইআইএফ) জানিয়েছে গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এসব বীমা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়ির মালিককে ২ লাখ নিউ তাইওয়ান ডলার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিআরইআইএফ। প্রাথমিক এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে নতুন বাড়ি তৈরির জন্য। তবে বাড়ির মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন সর্বোচ্চ ১.৫ মিলিয়ন নিউ তাইওয়ান ডলার।
২০০২ সালে তাইওয়ান রেসিডেন্সিয়াল আর্থকুয়েক ইন্স্যুরেন্স ফান্ড (টিআরইআইএফ) গঠন করে দেশটির সরকার।
শুরুতে এই তহবিলের আকার ছিল ১০০ বিলিয়ন নিউ তাইওয়ান ডলার। গত এপ্রিলে ভূমিকম্পের পর এই তহবিল ১২০ বিলিয়ন নিউ তাইওয়ান ডলারে উন্নীত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৩৩ বিলিয়ন।
বাংলাদেশের বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাইওয়ানের মতো বাংলাদেশের বহুতল ভবনগুলোকেও বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। এতে ভূমিকম্পের মতো যেকোন দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে। বীমা দাবির টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো দ্রুত সংস্কার বা নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব বহুতল ভবন বীমার আওতায় আনতে সরকারের নেয়া সাম্প্রতিক উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তারা।