মূলধন পরিশোধ না করার অভিযোগ কুদ্দুস পরিবারের পরিচালকদের বিরুদ্ধে
নিজের মালিকানাধীন মালিবাগের একটি ভবনের ফ্লোর বিক্রি করেন সোনালী লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ১৫তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের ৩য় থেকে ১৪তম তলার ১ লাখ ৩২ হাজার ৮শ’ স্কয়ার ফিট জায়গা বিক্রির তিনি চুক্তি করেন সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকায়।
ফ্লোর বিক্রি করে সোনালী লাইফ থেকে ২১২ কোটি টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, এই টাকা সোনালী লাইফ পরিশোধ করেছে আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই।
জমি, ভবন বা ভবনের ফ্লোর ক্রয়ের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সার্কুলারে বলা হয়েছে- আইডিআরএ’র সার্কুলার অনুসারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া জমি বা ভবন ক্রয় করা এবং এসব ক্রয় বাবদ লেনদেন করা অবৈধ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফ্লোর বিক্রির মূল্য বাবদ সোনালী লাইফ ২১২ কোটি টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পরিশোধ করেছে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের নভেস্বর মধ্যে।
অথচ সোনালী লাইফ ভবনটির ৭৪ হাজার ৭শ’ স্কয়ার ফিট জায়গা ক্রয়ের অনুমোদন চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও সোনালী লাইফের সাথে ফ্লোর বিক্রি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসারে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮শ’ বর্গফুটের ফ্লোরের মূল্য দেখানো হয় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। এই হিসেবে প্রতি বর্গফুট ফ্লোরের মূল্য দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৩শ’ ৫৫ টাকা।
অথচ আইডিআরএ’র কাছে ফ্লোর ক্রয়ের জন্য করা আবেদনে ৭৪ হাজার ৭শ’ স্কয়ার ফিটের মূল্য উল্লেখ করা হয় ১১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বর্গফুটের মূল্য দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩শ’ টাকা।
অর্থাৎ ফ্লোর ক্রয়ের চুক্তি ও আইডিআরএ’র কাছে করা আবেদনে প্রতি স্কয়ার ফিটের মূল্যের পার্থক্য ১৮ হাজার ৫৫ টাকা।
সোনালী লাইফ থেকে যেভাবে ২১২ কোটি টাকা নেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস
২০২১ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫২টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে সর্বমোট ২১২ কোটি ৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নেন মোস্তাফা গোলাম কুদ্দুস।
এর মধ্যে সোনালী লাইফের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৫০ কোটি ৩৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে। ১১টি পে-অর্ডারে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে ৪০ কোটি ৭০ লাখ ১৮ হাজার টাকা; ৩টি ফান্ড ট্রান্সফারে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ কোটি টাকা এবং ১টি চেকে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন একাউন্ট থেকে এসব টাকা নেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। লেনদেনগুলো হয় ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বরের মধ্যে।
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর অর্থাৎ একই দিনে এবং একই সাথে তিনটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে ফান্ড ট্রান্সফার করে পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ওই পে-অর্ডার তিনটির নম্বর ৩১১১৪৯৩, ৩১১১৪৯৪ ও ৩১১১৪৯৫।
সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে ট্রান্সফার করা হয়েছে সোনালী লাইফের ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক এবং একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে একইদিনে এসব অর্থ ট্রান্সফার করা হয়।