সব পদ থেকে অপসারিত হলেন জাহাঙ্গীর মোল্লা
অবশেষে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো জাহাঙ্গীর আলম মোল্লাকে। মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (চলতি) দায়িত্ব পালনের মাত্র দু’মাসেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের ‘সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর’ পদও চলে যায়। এমনকি, সবশেষ চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় জাহাঙ্গীর মোল্লাকে।
নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বীমা প্রতিষ্ঠান স্বদেশ ইসলামী লাইফে অস্থিরতা বাড়ছেই। যোগ্য ও দক্ষ সিইও’র অভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। জনবল সঙ্কট, গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্যদের নিয়োগ, অর্ধ-শিক্ষিত ব্যক্তিদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা- সব অনিয়মই যেন নিয়মে রুপ নিয়েছে। চরম অব্যবস্থাপনা ও সঠিক তদারকির অভাবে প্রতিটি স্থরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম জেকে বসেছে। ধ্বংসের পথে আগানো বেসরকারী খাতের এই জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানটিতে বেপরোয়া একটি চক্র- দেশের বীমা আইন কিংবা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) প্রজ্ঞাপনকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন, প্রশ্নবৃদ্ধ করছেন।
সাবেক সিইও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দেয়ায় আরো বেশি সংকটে পড়ে স্বদেশ লাইফ। এ অবস্থায় গত বোর্ড সভায় প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. জাহাঙ্গির আলম মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত সিইও’র দায়িত্ব দেয়া হয়। জাহাঙ্গির মোল্লা কাজ শুরু করলে মাত্র দু’মাস সাত দিন পর তার চলতি দায়িত্ব প্রত্যাহার করা হয়।
স্বদেশ ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানীর ৪৫ তম বোর্ড সভায় জাহাঙ্গীর মোল্লার বিষয় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এখানেই শেষ নয়, এরপর সিনিয়র ডিএমডির পদও চলে যায় জাহাঙ্গীর মোল্লার। চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লাকে ‘কোম্পানীতে প্রয়োজন নেই’ উল্লেখ করে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মাত্র দু’মাস সাত দিনে সিইও চলতি দায়িত্ব পদ চলে যাওয়া এবং দ্রুত চাকুরী থেকে বহিস্কারের কারণ জানতে চাইলে সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন লিখিত বক্তব্যে বলেন- ‘জাহাঙ্গীর আলম মোল্লাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানের অপর সিনিয়র ডিএমডি এ জেড কাওছার। তারা আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে কোম্পানিতে প্রবেশ করেছে, এটা আমি বুঝতে পারিনি। সারাক্ষণ আমার রুমে বসে বিভিন্ন পরিকল্পনা শুনাতো। সে হিসেবে আমি মনে করেছিলাম- ‘তারা মনে হয়, খুব ভালো সংগঠক, কোম্পানি ভালো কিছু আশা করতে পারে।’
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন আরো বলেন, ‘আমার নবায়ন না মঞ্জুর হওয়ার পর, চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানের ভিতর থেকে একজন কে দ্বায়িত্ব দেয়ার জন্য। তখন জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও কাওছার আমার এলাকায় নরসিংদী তে এসে, আমার- পা চেপে ধরে বলে, স্যার আমাদের থেকে যাকে আপনার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়- তাকে চেয়ারম্যান স্যারকে বলে দ্বায়িত্ব নিয়ে দেন। এখন তারা আমার বিশ্বাসের প্রতিদান দিচ্ছে।’ মূলত, অদক্ষতা, ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতার কারণেই জাহাঙ্গীর আলম মোল্লাকে চাকরী থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বদেশের বিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ।’
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সিইও (চলতি দায়িত্ব) জামাল উদ্দিন বলেন, সাবেক সিইও মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন এর ছত্রছায়ায় একটি চক্র গড়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটিতে। জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও তার সহযোগী সিনিয়র ডিএমডিএ জেড কাওছার এবং সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম মহিউদ্দিন বাবলু- এরা ছিল ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনের প্রেতাত্মা।
মূলত, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছাড়া-ই কোম্পানির বেতন ভাতা এবং সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। প্রশাসনিক অদক্ষতা, মাঠ পর্যায়ে সংগঠন গঠনে ব্যর্থতা, শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবসহ অনেক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে- তাকে বহিষ্কার এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অপরদিকে এ বিষয় জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত প্রসঙ্গ, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় চেয়াম্যানের অন্যায় আবদার-অনিয়মের প্রশ্রয় না দেয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন।