হরতাল-অবরোধেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে মোটর গাড়ি বীমায়
1 min read

হরতাল-অবরোধেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে মোটর গাড়ি বীমায়

অক্টোবর মাসের শেষ থেকে দেশে দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধ ঘোষণা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব অনুসারে, গেলো ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১৮২টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে আরো ২৯০টি গাড়ি। এ ঘটনায় প্রায় ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম শঙ্কায় রয়েছেন মোটরযানের মালিকরা।

এই ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধ বা ধর্মঘটের কারণে ক্ষতির শিকার যেকোন ধরণের যানবাহন যথাযথভাবে বীমা করা থাকলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এ জন্য মোটর বীমা পলিসিতে হরতাল-অবরোধের কভারেজ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

মোটর বীমা পলিসি হলো- গাড়ি, ট্রাক, মোটরসাইকেল এবং রাস্তার অন্যান্য যানবাহনের জন্য বীমা। এই বীমার মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির কারণে গাড়ির ক্ষতির বিপরীতে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করা হয়।

এক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের মৃত্যু, শারীরিক অনিষ্ঠতা ও সম্পত্তির ক্ষতিসহ চুরি, প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে উদ্ভূত গাড়ির ক্ষতি এই বীমার অন্তর্ভুক্ত।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথভাবে মোটর গাড়ির কম্প্রিহেন্সিভ বীমা কাভারেজ নেয়া থাকলে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় যেমন চুরি/ডাকাতি, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, ধর্মঘট, বিস্ফোরণ, সন্ত্রাস ইত্যাদি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, শিলাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, আগুন, বজ্রপাত ইত্যাদির ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়াও তৃতীয় পক্ষের আইনি দায়বদ্ধতা এবং সড়ক, রেল, বিমান বা নৌপথে ট্রানজিটের সময় দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণও পাওয়ার সুযোগ রয়েছে মোটর বীমা কাভারেজে।

এ বিষয়ে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন এফসিআইআই বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতাসহ হরতাল, অবরোধ, গণ বিক্ষোভ বা গণ আন্দোলন সবই মোটর বীমার কাভারেজের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ছাড়াও বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও মোটর বীমার অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো পূর্ব ঘোষণা দিয়ে যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে এগুলোও মোটর বীমা কাভারেজের আওতাভুক্ত। কারণ, এসব কর্মসূচি সরকারি কর্তৃপক্ষের কোন ঘোষণা নয় বা এতে সরকারের কোন স্বীকৃতি নেই।

তবে পাবলিক অথরিটি যদি এমন কোন হরতাল-অবরোধের ঘোষণা দেয় সেই হরতাল-অবরোধ মোটর বীমা কাভারেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যেমন- রাষ্ট্র বা সরকার যদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে অথবা নির্বাচনের মতো কোন কারণে যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেক্ষেত্রে এই বীমার কাভারেজ পাবে না, বলেন খালেদ মামুন।

সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামীম বলেন, প্রাইভেট ভেহিকল কম্প্রিহেন্সিভ কাভারেজ নেয়া থাকলে হরতাল-অবরোধেও যানবাহনের ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মোটর বীমা পলিসিতে অতিরিক্ত কিছু প্রিমিয়াম দিয়ে এই কাভারেজ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

তবে বর্তমানে আমাদের দেশে বেশিরভাগ যানবাহনের বীমা নেই। আমাদের কোম্পানিতে যেসব মোটর বীমা পলিসি ইস্যু হয় তাতে দেখা যায় ১০ শতাংশও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বীমার আওতায় নেই। শুধু স্কুল-কলেজের গাড়িগুলোকে দেখি বীমা গ্রহণ করতে। যদি এসব যানবাহনের মোটর বীমা যথাযথভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে হরতাল-অবরোধেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

শফিক শামীম আরো বলেন, বিদ্বেষপূর্ণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ চুরি/ডাকাতি, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, ধর্মঘট, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, আগুন, বজ্রপাত, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি মোটর বীমা কাভারেজের আওতাভুক্ত। তবে আনুষঙ্গিক ক্ষতি, অবচয়, ব্যবহারাদির ফলে ক্ষয়, যান্ত্রিক বা বৈদ্যুতিক ত্রুটির জন্য মেশিনারিজ বিকলের ক্ষেত্রে কাভারেজ পাওয়া যায় না মোটর বীমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *