জাতীয় বীমা দিবস আমাদের অহংকার: মো. কাজিম উদ্দিন
1 min read

জাতীয় বীমা দিবস আমাদের অহংকার: মো. কাজিম উদ্দিন

জাতীয় বীমা দিবস অবশ্যই গর্বের ও সম্মানের। এটা আমরা যারা বীমা পেশায় আছি তাদের অহংকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন বীমা পেশায় যোগদান করেন সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করা হয়। ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করার মূল উদ্যোগটি নেন শেখ কবির হোসেন।

এটা আমাদের কত বড় একটা পাওনা যে, জাতির পিতা বীমা পেশায় ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, আমি বীমা পরিবারের সন্তান। বঙ্গবন্ধু বীমা অফিসে বসেই ছয় দফা রচনা করেছিলেন। এই বিষয়গুলো বীমা পেশাজীবীদের কতটা সম্মানিত করেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বীমা পেশা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমরা ঋণী। তিনি শুধু দেশের স্বাধীনতার কথাই ভাবেননি, তিনি ভেবেছেন অর্থনৈতিক মুক্তির কথা।

আজকে আমাদের রাষ্ট্রীয় ২টি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন। এ দু’টিই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবদান। তিনি ভেবেছেন বীমা খাত শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। এতোটা দূরদর্শী চিন্তা তার ছিল। এজন্য আমরা তার কাছে ঋণী। বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তির জন্য হলেও বীমা পেশাজীবীদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। বছরে একদিন শুধু জাতীয় বীমা দিবস উৎযাপন করাই নয়, দেশের উন্নয়ন ও দেশের মানুষের উন্নয়নে বীমা খাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন।

জাতীয় বীমা দিবসকে কেন্দ্র করে বীমা কোম্পানিগুলো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও আইডিআরএ’র নির্দেশনায় সারাদেশে সরকারিভাবে বীমা নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য শোভাযাত্রা, লিফলেট বিতরণ, আলোচনা সভাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, বীমা দিবস পালনের কারণে এ খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বীমা খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ায় আজ বীমা দিবস অংশিদার হয়ে উঠছে। বীমা খাতের উন্নয়ন ও জাতীয় বীমা দিবস আজ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

 যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বীমা খাত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আর গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ প্রিমিয়াম নেয়া হয় না। ব্যাংকিং চ্যানেলে সরাসরি কোম্পানির একাউন্টে প্রিমিয়ামের টাকা জমা করতে পারে গ্রাহক। এতে আস্থা বাড়ছে। আগে যেমন ছিল গ্রাহকের কাছ থেকে একজন এজেন্ট হাতে হাতে নগদ টাকা নিত। সেই টাকা অনেক সময় কোম্পানিতে জমা হতো না। এখন আর সেই অভিযোগ নেই।

কোম্পানিগুলো দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে অনেকভাবেই কাজ করা হচ্ছে। বীমা কোম্পানিতে কল সেন্টার হয়েছে। সব সময় গ্রাহকরা টাচে থাকছে। এটা খুব ভালো পরিবর্তন।

স্মার্ট বাংলাদেশের যে কনসেপ্ট তা বীমা কোম্পানিগুলোতে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গ্রাহকরা তাদের প্রিমিয়াম জমার বিষয়ে মোবাইল ফোনে মেসেস পাচ্ছে। বকেয়া প্রিমিয়াম জমার বিষয়ে মেসেস দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকের মনে বীমা একটা জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে পরিবর্তন হচ্ছে। গ্রাহকের আস্থার সংকট নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে তা খুব বেশি দিন আমাদের আর শুনতে হবে না।

বীমার সুবিধাগুলোর বিষয়ে আমাদের সচেতনতা খুব বেশি নেই। ফলে গ্রাহকের আগ্রহ কম। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের চেয়ে এগিয়ে। আমাদের এখানে একটি বড় সমস্যা- বেশ কিছু কোম্পানি নানা ধরণের সমস্যার কারণে বীমা দাবি পরিশোধ করেনি বা করে না। গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হয়। ফলে নানা রকম অপপ্রচার রয়েছে। এটাও গ্রাহককে প্রভাবিত করে। তবে সরকার এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বীমা দাবি পরিশোধ করাকে আইডিআরএ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে খুব বেশি দিন এই সমস্যা থাকবে না।

এর পাশাপাশি আমাদের প্রচারণাও বাড়ছে। পত্র-পত্রিকায় বীমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে প্রতিনিয়তই আলোচনা হচ্ছে। এর একটা ভালো প্রভাব পড়ছে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বীমার গুরুত্ব বাড়ছে। ফলে সময়ের প্রয়োজনেই বীমার পরিবর্তন আসবে। আইডিআরএ সবসময়ই সংস্কারমূলক কাজ করছে। এটার ভালো প্রভাব রয়েছে।  ফলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো আমরাও বীমা খাত নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

২০১০ সালে বর্তমান সরকার বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করে। খুব অল্প সংখ্যক কর্মী ও কর্মকর্তা নিয়ে সংস্থাটি কাজ শুরু করে। এখনো সংস্থাটিতে যে জনবল রয়েছে তা ৮২টি কোম্পানি দেখভালের জন্য যথেষ্ট নয়। অনেক ভালো প্রবিধানমালা এখনো হয়নি। আইনেরও অনেক সংশোধন প্রয়োজন। এরপরও নতুন একটি সংস্থা হিসেবে তারা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে নতুন নতুন নীতিমালা করছে। তার বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে হঠাৎ করেই বা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তেমনি কাজ কিন্তু হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ করার কারণেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমছে। সবাই না করলেও কিছু কোম্পানি পারছে। বীমা দাবি পরিশোধে তারা যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। হাতে গোনা কিছু কোম্পানি বাদ দিলে বেশিরভাগ কোম্পানির দাবি পরিশোধের হার বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য তারা নিয়মিত তদারকি করছে। ফলে যে যাই বলুক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ কাজ কিন্তু করছে। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে বলেই কিন্তু বীমা খাতে পরিবর্তন আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *